৯ম ও ১০ম শ্রেণির জীব বিজ্ঞানের ২য় অধ্যায়ের নোট। ৯ম ও ১০ম শ্রেণির সকল বিষয়ের সকল অধ্যায়ের  নোট এখানে বা আমাদের সাইটটিতে দেওয়া আছে। 

৯ম ও ১০ম শ্রেণির জীব বিজ্ঞানের ২য় অধ্যায়ের নোট





কোষঃ- বৈষম্য ভেদ্য পর্দা দ্বারা আবৃত এবং জীবজ ক্রিয়াকলাপের একক যা অন্য সজীব মাধ্যম ব্যতিরেকেই নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে সক্ষম তাকে কোষ বলে। নিউক্লিয়াসের সংগঠনের ভিত্তিতে কোষ দুই ধরনের যথা : আদি কোষ ও প্রকৃত কোষ।

আদি কোষ : এ ধরনের কোষে সংগঠিত কোনো নিউক্লিয়াস থাকে না। নিউক্লিয়বস্তু সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে। এসব কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ইত্যাদি অঙ্গাণু থাকে না তবে রাইবোসোম উপস্থিত থাকে। নীলাভ সবুজ শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া এ ধরনের কোষ।

প্রকৃত কোষ : এসব কোষের নিউক্লিয়াস সুগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিয়ার ঝিল্লি দ্বারা নিউক্লিয়বস্তু পরিবেষ্টিত ও সুসংগঠিত। শৈবাল থেকে শুরু করে সপুষ্পক উদ্ভিদ এবং অ্যামিবা থেকে সর্বোন্নত প্রাণিদেহেও এ ধরনের কোষ থাকে।

দেহকোষ : বহুকোষী জীবের দেহ গঠনে এসব কোষ অংশ গ্রহণ করে। মাইটোটিক ও অ্যামাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে কোষ বিভাজিত হয়। বিভিন্ন তন্ত্র ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনে দেহকোষ অংশ নেয়।

জনন কোষ : যৌন জনন ও জনুক্রম দেখা যায় এমন জীবে জনন কোষ উৎপন্ন হয়। মিয়োসিস পদ্ধতিতে জনন মাতৃকোষের বিভাজন ঘটে এবং জনন কোষ উৎপন্ন হয়। জনন কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃজনন কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক থাকে।

মাইটোকন্ড্রিয়া : এটি দ্বিস্তর বিশিষ্ট ঝিল্লি দিয়ে ঘেরা। ভেতরের স্তরটি ভাঁজ হয়ে থাকে। এদের ক্রিস্টি বলে। ক্রিস্টির গায়ে বৃন্তযুক্ত গোলাকার বস্তু থাকে, একে অক্সিসোম বলে। অক্সিসোমে উৎসেচকগুলো সাজানো থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়নের ভেতরে থাকে ম্যাট্রিক্স। জীবের শ্বসনকার্যে সাহায্য করা মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রধান কাজ। এ জন্য মাইটোকন্ড্রিয়াকে শক্তির ঘর বলা হয়।

গলজি বস্তু : গলজি বস্তু প্রধানত প্রাণিকোষে পাওয়া যায়। হরমোন নিঃসরণেও এর ভূমিকা লক্ষ করা যায়। কখনো কখনো এরা প্রোটিন সঞ্চয় করে রাখে।
প্রোটোপ্লাজম : কোষের ভেতরে যে অর্ধস্বচ্ছ, থকথকে জেলির ন্যায় বস্তু থাকে তাকে প্রোটোপ্লাজম বলে। 

প্লাস্টিড : প্লাস্টিড উদ্ভিদ কোষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু। এর প্রধান কাজ খাদ্য প্রস্তুত করা, খাদ্য সঞ্চয় করা ও উদ্ভিদ দেহকে বর্ণময় ও আকর্ষণীয় করে পরাগায়ণে সাহায্য করা।

সেন্ট্রিওল : প্রাণিকোষের নিউক্লিয়াসের কাছে যে দুটি ফাঁপা নলাকার বা দণ্ডাকার অঙ্গাণু দেখা যায়, তাদেরকে সেন্ট্রিওল বলে।

ক্লোরোপ্লাস্ট : সবুজ রঙের প্লাস্টিডকে ক্লোরোপ্লাস্ট বলে। পাতা, কচি কাণ্ড ও অন্যান্য সবুজ অংশে এদের পাওয়া যায়। প্লাস্টিডে ক্লোরোফিল থাকে তাই এদের সবুজ দেখায়।

রাইবোসোম : প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয় প্রকার কোষেই এদের পাওয়া যায়। কোথায় আমিষ সংশ্লেষ হবে তার স্থান নির্ধারণ করা এর কাজ। প্রোটিনের পলিপেপটাইড চেইন সংযোজন এই রাইবোজোমে হয়ে থাকে।

লাইসোসোম : লাইসোসোম জীব কোষকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে এবং এর উৎসেচক আগত জীবাণুগুলোকে হজম করে ফেলে।

নিউক্লিয়াস : কোষের সব জৈবনিক ক্রিয়া বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে নিউক্লিয়াস। এর আকৃতি গোলাকার, ডিম্বাকার, নলাকার ইত্যাদি। সিভকোষ ও লোহিত রক্ত কণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না।

টিস্যু : একই গঠনবিশিষ্ট একগুচ্ছ কোষ একত্রিত হয়ে যদি একই কাজ করে এবং তাদের উৎপত্তিও যদি অভিন্ন হয় তখন তাদের টিস্যু বা কলা বলে। টিস্যু দুই ধরনের যথা : ভাজক টিস্যু ও স্থায়ী টিস্যু। ভাজক টিস্যু বিভাজনে সক্ষম কিন্তু স্থায়ী টিস্যু বিভাজিত হতে পারে না। স্থায়ী টিস্যু তিন প্রকার, যথা : সরল টিস্যু, জটিল টিস্যু ও নিঃস্রাবী টিস্যু (ক্ষরণকারী)।

সরল টিস্যু : যে স্থায়ী টিস্যুর প্রতিটি কোষ আকার, আকৃতি ও গঠনের দিক থেকে অভিন্ন তাকে সরল টিস্যু বলে। কোষের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে সরল টিস্যুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা : ১. প্যারেনকাইমা, ২. কোলেনকাইমা ও ৩. স্কে¬রেনকাইমা। 

জটিল টিস্যু : বিভিন্ন প্রকারের কোষ সমন্বয়ে যে স্থায়ী টিস্যু গঠিত হয় তাকে জটিল টিস্যু বলে। এরা উদ্ভিদে পরিবহনের কাজ করে, তাই এদের পরিবহন টিস্যুও বলা হয়। এ টিস্যু দুই ধরনের, যথা : জাইলেম ও ফ্লোয়েম। জাইলেম ও ফ্লোয়েম একত্রে উদ্ভিদের পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ (vascular bundle) গঠন করে।

প্রাণী টিস্যুর প্রকাভেদ : প্রাণিটিস্যু তার গঠনকারী কোষের সংখ্যা, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের নিঃসৃত পদার্থের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে প্রধানত চার ধরনের হয়। যথা : ১. আবরণী টিস্যু, ২. যোজক টিস্যু, ৩. পেশি টিস্যু, ৪. স্নায়ু টিস্যু।

টিস্যুতত্ত্ব : টিস্যু নিয়ে আলোচনাকে টিস্যুতত্ত্ব বা Histology বলে।

অঙ্গ ও তন্ত্র : এক বা একাধিক টিস্যুর সমন্বয়ে গঠিত এবং নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনে সক্ষম প্রাণিদেহের অংশবিশেষকে অঙ্গ (Organ) বলে। আবার পরিপাক, শ্বসন, রেচন, প্রজনন ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন  করার জন্য প্রাণিদেহে কতগুলো অঙ্গের সমন্বয়ে বিভিন্ন তন্ত্র গঠিত হয়।

অণুবীক্ষণ যন্ত্র : যে যন্ত্রের সাহায্যে ক্ষুদ্র বস্তু বড় করে দেখা যায় তাকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে। এ যন্ত্র দুই ধরনের। যথা : সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র ও জটিল অণুবীক্ষণ যন্ত্র।



এই অধ্যায়ের কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তরঃ- 

প্রশ্ন ॥ ১ ॥ অ্যারেনকাইমা কী?
উত্তর : জলজ উদ্ভিদের বড় বড় বায়ুকুঠুরী যুক্ত প্যারেনকাইমাকে অ্যারেনকাইমা বলে।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ ক্রোমোপ্লাস্টের প্রধান কাজ কী?
উত্তর : ক্রোমোপ্লাস্টের প্রধান কাজ ফুলকে আকর্ষণীয় করে পরাগায়নে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ প্যারেনকাইমা টিস্যুর কাজগুলো লেখ।
উত্তর : প্যারেনকাইমা টিস্যুর কাজগুলো হলোÑ র) খাদ্য প্রস্তুত করা রর) খাদ্য সঞ্চয় করা ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন করা ররর) দেহ গঠন করা।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ ক্রিস্টি কী?
উত্তর : মাইটোকন্ড্রিয়ায় ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকা অংশটিকে ক্রিস্টি বলে।
প্রশ্ন ॥ ৫ ॥ কোষ প্রাচীর কাকে বলে?
উত্তর : উদ্ভিদ কোষের ভেতরে ও বাইরের তরল পদার্থের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করে তাকে কোষ প্রাচীর বলে।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ নিউক্লিয়াসবিহীন সজীব উদ্ভিদ কোষের নাম লেখ।
উত্তর : নিউক্লিয়াসবিহীন সজীব উদ্ভিদ কোষÑসিভনল।
প্রশ্ন ॥ ৭ ॥ কোষ অঙ্গাণু কাকে বলে? 
উত্তর : কোষের সাইটোপ্লাজমে যে সমস্ত সজীব বস্তু থাকে এবং কোষের বিভিন্ন জৈবনিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় তাদের কোষ অঙ্গাণু বলে। 
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ তরুণাস্থি কাকে বলে?
উত্তর : কানেকটিভ টিস্যুর যেগুলোর মাতৃকা কঠিন অথচ কোমল এবং কোষগুলোর মধ্যে বড় ফাঁক থাকে তাকে তরুণাস্থি বলে।
প্রশ্ন ॥ ৯ ॥ পেশি টিস্যু কাকে বলে?
উত্তর : প্রাণীর মেসোডার্ম থেকে উৎপন্ন সংকোচন ও প্রসারণশীল বিশেষ ধরনের টিস্যুকে পেশি টিস্যু বলে।
প্রশ্ন ॥ ১০ ॥ অস্থি এবং তরুণাস্থি কী ধরনের টিস্যু? 
উত্তর : অস্থি এবং তরুণাস্থি স্কেলেটাল কানেক্টিভ টিস্যু।
প্রশ্ন ॥ ১১ ॥ মানুষের মস্তিষ্ক কোথায় সুরক্ষিত থাকে?
উত্তর : মানুষের মস্তিষ্ক দেহ কঙ্কালের করোটির মধ্যে সুরক্ষিত থাকে।
প্রশ্ন ॥ ১২ ॥ পরিপাকতন্ত্রের অংশগুলো কোন ধরনের পেশি দ্বারা গঠিত?
উত্তর : পরিপাকতন্ত্রের অংশগুলো অনৈচ্ছিক পেশি দ্বারা গঠিত। 
প্রশ্ন ॥ ১৩ ॥ তরল কানেকটিভ টিস্যুর প্রধান গঠন বৈশিষ্ট্য কী? 
উত্তর : তরল কানেকটিভ টিস্যুর প্রধান গঠন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর মাতৃকা তরল।
প্রশ্ন ॥ ১৪ ॥ হরমোন কাকে বলে?
উত্তর : উচ্চশ্রেণির প্রাণিদেহে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসকে হরমোন বলে।
প্রশ্ন ॥ ১৫ ॥ স্নায়ুতন্ত্র কাকে বলে?
উত্তর  : যে তন্ত্রের মাধ্যমে প্রাণিদেহ দেহের বাইরের ও অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং সে অনুযায়ী উপযুক্ত প্রতিবেদন সৃষ্টি করে সে তন্ত্রকে স্নায়ুতন্ত্র বলে।
প্রশ্ন ॥ ১৬ ॥ প্রাণিটিস্যুর মাতৃকা কাকে বলে?
উত্তর : প্রাণিটিস্যুর কোষ সমষ্টি থেকে নিঃসৃত পদার্থকে মাতৃকা বলে।
প্রশ্ন ॥ ১৭ ॥ উচ্চশ্রেণির প্রাণিদেহ কত প্রকার পেশি নিয়ে গঠিত?
উত্তর : উচ্চশ্রেণির প্রাণিদেহ তিন প্রকার পেশি নিয়ে গঠিত। 
প্রশ্ন ॥ ১৮ ॥ অঙ্গের সঞ্চালন ও চলন কোন পেশির দ্বারা ঘটে?
উত্তর : ঐচ্ছিক পেশির দ্বারা অঙ্গের সঞ্চালন ও চলন ঘটে।
প্রশ্ন ॥ ১৯ ॥ স্নায়ুকোষের প্রধান কাজ উল্লেখ কর।
উত্তর : স্নায়ুকোষের প্রধান কাজ- উত্তেজিত হওয়া ও উদ্দীপনা বহন করা।
প্রশ্ন ॥ ২০ ॥ পরিণত অবস্থায় নিউরনে কী অনুপস্থিত?
উত্তর : পরিণত অবস্থায় নিউরনে সেন্ট্রিওল অনুপস্থিত।
প্রশ্ন ॥ ২১ ॥ মানবদেহে সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ কোষের নাম কী?
উত্তর : মানবদেহে সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ কোষের নাম  নিউরন বা স্নায়ুকোষ।
প্রশ্ন ॥ ২২ ॥ কোন টিস্যুর মাধ্যমে পানির ঊর্ধ্বমুখী সংবহন ঘটে?
উত্তর : উদ্ভিদদেহে জটিল টিস্যুর জাইলেম দ্বারা পানির ঊর্ধ্বমুখীর সংবহন ঘটে।
প্রশ্ন ॥ ২৩ ॥ সিভপ্লেট কাকে বলে?
উত্তর : প্রতিটি সিভনলের প্রান্তে প্রস্থপ্রাচীর চালুনির মতো ছিদ্রযুক্ত হয়ে যে বিশেষ গঠন সৃষ্টি করে তাকে সিভপ্লেট বলে।


 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 

প্রশ্ন ॥ ১ ॥ স্কেলিটাল যোজক টিস্যু বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : দেহের অভ্যন্তরীণ কাঠামো গঠনকারী টিস্যুকে স্কেলিটাল যোজক টিস্যু বলে। এর মাধ্যমে দেহের অভ্যন্তরীণ কাঠামো গঠন করে। দেহকে নির্দিষ্ট আকৃতি ও দৃঢ়তা দেয়। অঙ্গ সঞ্চালন ও চলনে সহায়তা করে। দেহের নাজুক ও নরম অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ ট্রাকিড কোষের গঠন লেখ।
উত্তর : ট্রাকিড কোষ লম্বা। এর দুপ্রান্ত সরু ও সুচালো। প্রাচীরে লিগনিন জমে পুরু হয়ে অভ্যন্তরীণ গহ্বর বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পানির চলাচল পার্শ্বীয় জোড়া কূপের মাধ্যমে হয়। এর প্রাচীরের পুরুত্ব অনেক রকম হয়, যেমন : বলয়াকার, সর্পিলাকার, সোপানাকার, জালিকাকার ও কূপাঙ্কিত। ফার্ন বর্গ, নগ্নবীজী ও আবৃতবীজী উদ্ভিদের প্রাথমিক ও গৌণ জাইলেম কলায় ট্রাকিড দেখা যায়। কোষরসের পরিবহন অঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদান প্রধান কাজ। তবে কখনো খাদ্য সঞ্চয়ের কাজও এ টিস্যু করে থাকে।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ নিউক্লিয়াস কয়টি অংশ নিয়ে গঠিত ও কী কী?
উত্তর : নিউক্লিয়াস চারটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা : র) নিউক্লিয়াস রর) নিউক্লিওপ্লাজম ররর) নিউক্লিয়ার ঝিল্লী ও রা) ক্রোমাটিন ও জালিকা।
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ কোষে গলজি বডি ও সেন্ট্রোসোমের অবস্থান ও কাজ উল্লেখ কর। 
উত্তর : গলজি বডি কোষের নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি অবস্থান করে। লাইসোসোম তৈরি, অপ্রোটিন জাতীয় পদার্থ সংশ্লেষণ ও কিছু এনজাইম নির্গমন করা এর কাজ।
প্রাণিকোষে নিউক্লিয়াসের বাইরে সেন্ট্রোসোম অবস্থান করে। কোষ বিভাজনের সময় স্পিন্ডল যন্ত্রের মেরু নির্দেশ করা এবং কোষ বিভাজনে সাহায্য করা এর কাজ।
প্রশ্ন ॥ ১১ ॥ প্রকৃত কোষের বৈশিষ্ট্য কী কী?
উত্তর : প্রকৃতকোষের বৈশিষ্ট্য হলো : ১. কোষের নিউক্লিয়াস সুগঠিত। ২. সুস্পষ্ট নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিওলাস থাকে। ৩. ক্রোমোসোমে প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদান থাকে। ৪. এসব কোষে রাইবোসোম ছাড়া অন্যান্য কোষীয় অঙ্গাণু উপস্থিত থাকে।
প্রশ্ন ॥ ১২ ॥ স্টোন সেলের গঠন কেমন?
উত্তর : স্টোন সেল খাটো, সমব্যাসীয়, লম্বাটে আবার কখনও তারকাকার হতে পারে। এদের গৌণপ্রাচীর খুবই শক্ত। অত্যন্ত পুরু ও লিগনিনযুক্ত। কোষ প্রাচীর কূপযুক্ত হয়।
প্রশ্ন ॥ ১৩ ॥ স্কে¬রাইড টিস্যু কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর : স্কে¬রাইড টিস্যু নগ্নবীজী ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কর্টেক্স, ফল ও বীজত্বকে পাওয়া যায়। এরা বহিঃত্বক জাইলেম ও ফ্লোয়েমের সাথে একত্রে পত্রবৃন্তে কোষগুচ্ছরূপে থাকতে পারে।
প্রশ্ন ॥ ১৪ ॥ কোষপ্রাচীরের কাজগুলো কী কী?
উত্তর : কোষপ্রাচীরের কাজ হলো  কোষকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করা। কোষকে দৃঢ়তা প্রদান করা। কোষের আকার ও আকৃতি বজায় রাখা। পার্শ্ববর্তী কোষের সাথে প্লাজমোডেজমাটা সৃষ্টির মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করা। পানি ও খনিজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা।
প্রশ্ন ॥ ১৫ ॥ মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের শক্তিঘর বলা হয় কেন?
উত্তর : শক্তি উৎপাদনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ক্রেবস চক্রের বিক্রিয়াগুলো মাইটোকন্ড্রিয়াতে সম্পন্ন হয়। ক্রেবস চক্রের অংশগ্রহণকারী সব উৎসেচক এতে উপস্থিত থাকায় এ বিক্রিয়াগুলো মাইটোকন্ড্রিয়াতেই সম্পন্ন হয়। ক্রেবস চক্রে সর্বাধিক শক্তি উৎপাদিত হয়। এজন্য মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র বা পাওয়ার হাউস বলা হয়। 
প্রশ্ন ॥ ১৭ ॥ উন্নত প্রাণীদের দেহকে অঙ্গ ও তন্ত্র সচল ও কার্যক্ষম রাখে কীভাবে?
উত্তর : মানুষ ও অন্যান্য উন্নত প্রাণীদের দেহ কতগুলো নির্দিষ্ট তন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত। বিভিন্ন তন্ত্রের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমেই মানুষের এবং প্রাণিদেহের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ সম্পাদিত হয়। সকল উন্নত প্রাণীর ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্র এবং অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র সম্মিলিতভাবে সকল অঙ্গের অর্থাৎ সকল তন্ত্রের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে দেহকে সচল ও কার্যক্ষম রাখে। 
প্রশ্ন ॥ ১৮ ॥ টিস্যু বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : নির্দিষ্ট ভ্রƒণীয় স্তর থেকে উৎপন্ন সম বা অসম আকৃতির কতগুলো কোষ যখন সম্মিলিতভাবে প্রায় একই কাজ করে তখন সেই সমষ্টিগত কোষকে একত্রে টিস্যু বলা হয়।
প্রশ্ন ॥ ১৯ ॥ কঙ্কাল যোজক টিস্যুর কাজগুলো লেখ।
উত্তর : কঙ্কাল যোজক টিস্যুর কাজগুলো হলো : ১. দেহের গঠন বৈচিত্র্যের জন্য স্কেলিটাল টিস্যু দেহের কাঠামো তৈরি করে। ২. পেশি সংযোগের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করে। ৩. দেহের নরম অঙ্গগুলোকে সুরক্ষিত রাখে যেমন : খুলির অস্থি মস্তককে এবং পিঞ্জর অস্থিগুলো ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডকে আবদ্ধ রাখে। ৪. মজ্জাকে আবৃত রাখে।
প্রশ্ন ॥ ২০ ॥ হৃদপেশি তন্তুর গঠনগত বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তর : হৃদপেশির তন্তুগুলো পরস্পর অনিয়মিতভাবে যুক্ত থেকে জালের মতো গঠনের সৃষ্টি করে। কোষগুলোর সংযোগস্থলে কোষপর্দা ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে এক বিশেষ অনুপ্রস্থ রেখা সৃষ্টি করে। একে ইন্টারক্যালাটেড ডিস্ক বলে। এ ডিস্ক হৃৎপেশির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
প্রশ্ন ॥ ২১ ॥ ফুল ও ফল রঙিন হয় কেন?
উত্তর : ক্রোমোপ্লাস্টের কারণে ফুল ও ফল রঙিন হয়।
ফুল ও ফল রঙিন প্লাস্টিড তবে এরা সবুজ নয়। এসব প্লাস্টিড জ্যান্থফিল, ক্যারোটিন, ফাইকোইরিথ্রিন, ফাইকোসায়ানিন ইত্যাদি বর্ণের কণিকা ধারণ করে তাই কোনোটিকে হলুদ, কোনোটিকে নীল আবার কোনোটিকে লাল দেখায়। এদের মিশ্রণজনিত কারণে ফুল, ফল ও উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন ॥ ২২ ॥ নিউক্লিয়াস কয়টি অংশ নিয়ে গঠিত এবং এগুলো কী কী?
উত্তর : নিউক্লিয়াস চারটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা : ১. নিউক্লিয়ার ঝিল্লি, ২. নিউক্লিওপ্লাজম, ৩. নিউক্লিওলাস, ৪. ক্রোমাটিন জালিকা।
প্রশ্ন ॥ ২৩ ॥ ভেসেল কোষের গঠন লেখ।
উত্তর : ভেসেল কোষগুলো খাটো চোঙের ন্যায়। কোষগুলো একটির মাথায় একটি সজ্জিত হয়ে এবং প্রান্তীয় প্রাচীর গলে একটি দীর্ঘ নলের ন্যায় অঙ্গের সৃষ্টি করে। এর ফলে কোষরসের ঊর্ধ্বারোহণের জন্য একটি সরু পথ সৃষ্টি হয়ে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় এ কোষগুলো প্রোটোপ্লাজমপূর্ণ থাকলেও পরিণত বয়সে এরা মৃত ও প্রোটোপ্লাজমবিহীন।
প্রশ্ন ॥ ২৪ ॥ উড ফাইবারের অবস্থান ও কাজ লেখ।
উত্তর : অবস্থান : দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের সব জাইলেমে উড ফাইবার অর্থাৎ জাইলেম ফাইবার অবস্থান করে।
উড ফাইবারের কাজ হলো : ১. পানি ও খনিজ পদার্থ পরিবহন, ২. খাদ্য সঞ্চয়, ৩. উদ্ভিদকে যান্ত্রিক শক্তি প্রদান, ৪. উদ্ভিদকে দৃঢ়তা প্রদান।
প্রশ্ন ॥ ২৫ ॥ বাস্ট ফাইবারের গঠন লেখ।
উত্তর : এরা অত্যন্ত দীর্ঘ, পুরু প্রাচীরযুক্ত, শক্ত এবং দুই প্রান্ত সরু। তবে কখনো ভোঁতা হতে পারে। প্রাচীরের গায়ে ছিদ্র থাকে। এ ছিদ্রকে কূপ বলে। এগুলো এক প্রকার দীর্ঘ কোষ যাদের প্রান্তদেশ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে।
প্রশ্ন ॥ ২৬ ॥ লোহিত কণিকা কী কাজ করে?
উত্তর : লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিনের সাথে অক্সিজেন যুক্ত হয়ে অক্সি হিমোগ্লোবিন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাথে যুক্ত হয়ে কার্বোঅ্যামিনো হিমোগ্লোবিন গঠন করে যথাক্রমে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবহন করে। এভাবে লোহিত কণিকা দেহের বিভিন্ন স্থানে অক্সিজেনের জোগান দেয় এবং দেহের কার্বন ডাইঅক্সাইডকে ফুসফুসে নিয়ে দেহের বাইরে বের করে দেয়।
প্রশ্ন ॥ ২৭ ॥ একটি উদ্ভিদ বা প্রাণিদেহে অঙ্গ ও অঙ্গতন্ত্রের পার্থক্য নির্ণয় কর।
উত্তর : যখন কয়েক ধরনের টিস্যু একসাথে একটি সাধারণ কাজ করে সেই টিস্যু সমষ্টিকে অঙ্গ বলে। যেমন : পেশি, রক্ত ও ত্বক টিস্যু একসাথে পাকস্থলি গঠন করে যা একটি অঙ্গ। উদ্ভিদের অঙ্গগুলো যেমন : মূল, কাণ্ড, ফুল অনেকগুলো টিস্যুর সমন্বয়ে গঠিত। আবার কয়েক রকমের অঙ্গ এক সাথে কাজ করে একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করার জন্য। এ রকম একগুচ্ছ অঙ্গকে তন্ত্র বলে। যেমন : আমাদের শ্বাসতন্ত্র নাক, শ্বাসনালি এবং ফুসফুস অঙ্গ নিয়ে গঠিত। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পরিবহনতন্ত্র একটি উদাহরণ।